প্রকাশিত: ১০/০৩/২০১৮ ১:২৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৩৮ এএম

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ::
সীমান্ত জনপদ উখিয়া-টেকনাফে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অত্র এলাকার হাজার হাজার একর সবুজ বনভুমি, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনের পর দিন ন্যাড়া করে ধ্বংস করে দিয়েছে প্রাকৃতিক দৃর্শ্যেঘেরা পাহাড় গুলো। নষ্ট করে দিয়েছে শত শত একরের সামাজিক বনায়ন। এমনকি তাদের পদভারে দিনের পর দিন বিলীন ও দখল হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একরের ফসলী জমি।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের নতুন নতুন বাসস্থান। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
কিন্তু সেই বিলীন ও দখল থেকে কিছুটা হলেও টেকনাফের সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বস্তি ছিল। টেকনাফ পৌরসভা ও সদর ইউনিয়ন ঘেঁষা বেশ কয়েকটি পাহাড় ছিল মনোরম দৃর্শ্যে ঘেরা সবুজের ছায়া। অতচ দূষ্কৃতিকারীরা ৮ মার্চ সেই বনায়ন সৌন্দর্য্য লীলাভুমি পাহাড় গুলো ধ্বংস করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে একশত একর সামাজিক বনায়ন ও পশু খাদ্য বাগান।
হঠাৎ করে দিনের বেলায় পাহাড়ে দাউ দাউ আগুন জ্বলতে দেখে টেকনাফবাসীসহ পুরো প্রশাসনের মাঝেও আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়ের প্রায় ৪০ টি পয়েন্টে দূর্বৃত্ত্বরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে একশ একর সৃজিত বাগানসহ কয়েকশ একর প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা বাগান পুড়ে যায়। পাশাপাশি পুড়ে গেছে বন্য পশুদের জন্য সৃজিত ২৫ একর খাদ্য বাগানও। বনবিভাগসহ উপজেলা প্রশাসন আগুন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করলেও বাতাসের গতিবেগ থাকায় প্রায় ৭-৮ ঘন্টা যাবৎ জ্বলতে থাকে সবুজ বন। অবশেষে বিকাল সাড়ে ৫ টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।
টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, উক্ত ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রী (নং- ৩৬৬, তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮) করা হয়েছে এবং কে বা কারা আগুন লাগানোর গঠনায় জড়িত রয়েছে তা তদন্ত করতে টেকনাফ সদরের এসিএফ দেওয়ান মোঃ আবদুল হাই আজাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত টীম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এসব দূষ্কৃতকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এঘটনায় এপর্যন্ত কাউকে চিহ্নীত করা যায়নি বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, পুড়ে যাওয়া পাহাড়ে সামাজিক বনায়নে আকাশমনি গাছের বাগান সৃজিত করা হয়েছিল। সেই গাছগুলি প্রায় পুড়ে গেছে। যদি বৃষ্টি হয় অনেক চারা নতুন ভাবে আবার গজে উঠবে। তার পাশাপাশি আমরা খুব দ্রুত বনায়ন সৃজনের জন্য আজ থেকে নার্সারী তৈরী করব। দূর্বৃত্ত্বের এই আগুনে বন-বিভাগের প্রায় কোটি টাকা ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার (৯ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত পুরো পাহাড় ধুঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকতে দেখা গেছে। সুত্রে জানা যায়,কক্সবাজার জেলার দক্ষিন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির পুড়িয়ে যাওয়া পাহাড় পরিদর্শণ করেছেন।
এই রহস্যময় আগুনের সুত্রপাত কিভাবে হয়েছে। কারা আগুন লাগিয়েছে,তাদের উর্দ্দেশ্য কি,এই সমস্ত বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে
টেকনাফের সু-সীল সমাজ অভিমত প্রকাশ করে বলেন, দর্খিয়া-টেকনাফের প্রাকৃতিক দৃশ্য ঘেরা বনভুমিকে ধ্বংস ও দখল করার জন্য একটি দুষ্কৃতিকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে আড়ালে থেকে অসাধু রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ ও উস্কানীমুলক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়াটাও তাদেরই কাজ এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেনা টেকনাফের সাধারন মানুষ। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বসবাসের সুযোগ করে দিতে একটি অর্থলোভী চক্র পাহাড়ে আগুন লাগিয়েছে এমন মন্তব্যও শুনা যাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেনী পেষার মানুষের মাঝে।
তাছাড়া ভুমিদস্যুরা পাহাড়ী জমি দখল করার পাঁয়তারার বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না বলে দাবী করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা আবদুল হাকিম ডাকাত গহীন পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে এলাকায় ডাকাতি, খুন-গুম ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে নির্র্মূল করার জন্য গত এক মাস ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলন ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এমনকি উপজেলা পরিষদ ঘেঁষে পুরান পল্লান পাড়ায় হাকিম ডাকাতের বসত বাড়ীতে এলাকাবাসী হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী হাকিম ডাকাতকে এলাকা ছাড়া করতে এবং গহীন পাহাড় থেকে তাকে তাড়ানোর জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও এড়িয়ে যাচ্ছেনা সংশ্লিষ্টরা।
এব্যপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, টেকনাফের পাহাড়ে আগুন দেওয়ার বিষয়ে টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে একটি সাধারন ডায়রী করেছে। পাশাপাশি বনবিভাগ ও সামাজিক বনায়ন বিনষ্ট করার পিছনে যারাই জড়িত থাকুক না কেন বিষয়টি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ৫৯ সেনা-বিজিপি সদস্য

আরাকান আর্মির হামলার মুখে ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ির ...